খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়িতে এক স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ভয়াবহ ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পাহাড়। এই ঘটনার প্রতিবাদ এবং ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে শনিবার সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলা এই অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে।
পর্যটকদের চরম দুর্ভোগ
অবরোধের জেরে খাগড়াছড়ি ও বিখ্যাত সাজেক ভ্যালিতে অন্তত সাড়ে ৩ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র সাজেক ভ্যালিতেই প্রায় ২ হাজার ১০০ জন দেশি-বিদেশি ভ্রমণপ্রেমী রয়েছেন। সকালে যে আনন্দ নিয়ে তারা পাহাড়ে এসেছিলেন, বর্তমানে তা দুর্ভোগ ও উৎকণ্ঠায় পরিণত হয়েছে। অনেক পর্যটককে প্রায় তিন-চার কিলোমিটার হেঁটে শহরে ঢুকতে দেখা গেছে।
অন্যদিকে, ঢাকা ও অন্যান্য জেলা থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী বাসগুলো মাঝপথে আটকা পড়ায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। শ্রমজীবী মানুষ থেকে শুরু করে পর্যটকরা এই পরিস্থিতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অবরোধের চিত্র ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
আন্দোলনকারীরা সকাল থেকেই খাগড়াছড়ির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গাছ কেটে ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করছে। এর ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়ক ও আন্তঃসড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অবরোধের কারণে বলপিয়া আদাম এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। তবে শহর এলাকায় হালকা কিছু ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করতে দেখা গেছে।
সাধারণ মানুষের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ টহলে থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেকটা নিষ্ক্রিয় থেকেছে এবং তারা শুধু দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি দেখছেন।
তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল বাতেন মৃধা জানিয়েছেন, অবরোধের কারণে কোথাও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, জনজীবন স্বাভাবিক আছে এবং সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শনিবার স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকে তুলনামূলকভাবে কম বিপাকে পড়তে হয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনা ও আইনি পদক্ষেপ
গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১-এর আগের মঙ্গলবার) সন্ধ্যায় খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালা এলাকায় এই ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটে। প্রাইভেট পড়ে ফেরার পথে এক স্কুলছাত্রীকে চেতনানাশক দিয়ে অজ্ঞান করে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। রাতে খোঁজাখুঁজির পর পরিবার তাকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরদিন বুধবার সকালে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পুলিশ সিঙ্গিনালা এলাকা থেকে শয়ন শীল নামে এক যুবককে আটক করে। বর্তমানে সে ৬ দিনের রিমান্ডে রয়েছে।
Leave a Reply