নিজস্ব প্রতিবেদক
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের ঘোষকান্দা এলাকায় অবস্থিত আল-মুজাহিদ বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ, জালিয়াতি ও ভূমিদস্যুতার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে পকেট কমিটি গঠন করে সমিতির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রেখে আসছে একটি চক্র। স্থানীয়রা দাবি করছেন, ভুয়া ভোটার তালিকা তৈরি করে সমিতির অভ্যন্তরীণ নির্বাচন জালিয়াতির মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
২০২৩ সালে সাধারণ সদস্যরা অভিযোগ করেন, সমিতির কিছু কর্মকর্তা প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, সদস্যদের বিনিয়োগ করা টাকা নানা প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে, অথচ তাদের কোনো হিসাব দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহজাহান মুন্সী অভিযোগ করেছেন, তিনি নিজের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে সমিতির সাবেক ও বর্তমান সভাপতি মোতাহার হোসেন ও আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি চক্র তার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার নির্মাণাধীন বাড়ির দেয়াল ভেঙে দেওয়া হয়, শ্রমিকদের মারধর করা হয় এবং নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এ ঘটনায় দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। বরং অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা অভিযুক্তদের মদত দিচ্ছেন, যার ফলে চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শাহজাহান মুন্সীর অভিযোগ, তাকে ও তার পরিবারকে হত্যা করার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাবেক সভাপতি মোতাহার হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এলাকাবাসী এই ঘটনার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, প্রশাসন যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্থানীয় কিছু জমির মালিকের অভিযোগের ভিত্তিতে সমিতি নির্মাণকাজ বন্ধ করেছে। তবে কোন আইনি ভিত্তিতে সমিতি এমন পদক্ষেপ নিতে পারে, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
একটি সমবায় সমিতির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই অনিয়ম, দুর্নীতি ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত অভিযোগগুলো যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনা।
Leave a Reply