স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :
খাগড়াছড়ি গুইমারাতে মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে কোরিয়া-ভিত্তিক আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠীর সম্প্রদায় পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায়বিচারের আহ্বান জানিয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নৃশংসতার নিন্দা করে।
২০২৫ সালের ৪ অক্টোবর দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসরত পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী ২৭-২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক তাদের সহজনগোষ্ঠীর ওপর হামলা ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে সিউলের কেন্দ্রস্থলে একটি জনসমাবেশের আয়োজন করেন।
আয়োজকরা উল্লেখ করেন যে এই বিক্ষোভ কোরিয়ার জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের একটি প্রচেষ্টা ছিল, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাঙালি বসতি স্থাপনকারীদের দ্বারা ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের পার্বত্য চট্টগ্রামে কয়েক দশক ধরে সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতি।
কোরিয়ায়, আদিবাসী জুম্ম জনগোষ্ঠী ১৯৯৪ সাল থেকে বসবাস করে আসছে এবং ২০০২ সালে জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক কোরিয়া প্রতিষ্ঠা করেছে, যা পরিবার, শিশু এবং অভিবাসী শ্রমিক সহ প্রায় ২০০ সদস্যের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন।
তাঁর বক্তৃতায়, জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক-কোরিয়ার সভাপতি জনাব চাকাম নিখিল উল্লেখ করেন যে বাস্তবতা হৃদয়বিদারক। পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী জনগণের জীবন আর নিরাপদ নয়। যেকোনো মুহূর্তে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হতে পারে, তাদের গ্রাম ধ্বংস করা হতে পারে, তাদের কন্যাদের ওপর হামলা করা হতে পারে। তবুও, যারা নিহত, আক্রান্ত বা লঙ্ঘিত হয়েছে তাদের পরিবার কখনো ন্যায়বিচার পায় না।
“আমাদের সত্য বলতে হবে: বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান অপরাধী, এবং সরকার জড়িত রয়েছে — আদিবাসী জনগণকে রক্ষা করার পরিবর্তে বসতি স্থাপনকারীদের সক্ষম ও সমর্থন করছে। এটি শুধুমাত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনগণের ওপর আক্রমণ নয় — এটি মানব মর্যাদা, ন্যায়বিচার এবং সকল নিপীড়িত জনগণের অধিকারের ওপর আক্রমণ। নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা শুধুমাত্র এই অপরাধগুলি চলতে দেয়,” তিনি যোগ করেন।
জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক অন্যতম সদস্য জীবন মারমা বলেছে- অতীতের আওয়ামীলীগ সরকার থাকার কালীন আমাদের পাহাড়ে শান্তি রক্ষা করতে পারেনি। এই ধরনের ধর্ষণ, অত্যাচার, জুলুম অন্যায়ের বিরোধী কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বতর্মানে অন্তরভুক্ত কালীন সরকার ক্ষমতায় এসেছে ১ বছরেও বেশি হয়ে গেল। কিন্তু তারাও আমাদের আদিবাসিদের সুরক্ষা দিতে পরিনি।
আওয়ামীলীগ সরকার এবং বর্তমান অন্তর্ভুক্ত কালীন সরকার আমাদের আদিবাসীদের সাথে বিশ্বাসঘাটকতা বেয়মানি করা হয়েছে। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আদিবাসীদের শান্তি চুক্তি বাস্তববায়ন করা হবে বলে মিথ্যে আশা দেওয়া হয়েছিল। এবং বতর্মান অন্তর্ভুক্কালীন সরকারও আমাদের আদিবাসিদের সাথে বেয়মানি বিশ্বাসঘাটক করেছে। ক্ষমতায় আসায় পূর্বে কথা দিয়েছিল আদিবাসীদের অধিকার এবং যে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা সেটার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে আশা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বতর্মানে তার কোনো প্রমাণ পায়নি। অতীতে যে নির্যাতন, অত্যাচার, শোষণ সেটা যে পরিবর্তন বা উন্নতি হয়েছে তা কোনো আমাদের জানা নেই। বরঞ্চ আমরা এখনো উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছি। দিনে পর দিন রাতের পর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেয় চলেছে।
পৃথিবীতে এমন কোনো রাষ্ট্র নেই যে অন্যায় ধর্ষণে বিরোদ্ধে প্রতিবাদ করলে সেনাবাহিনীরা ব্রাশ ফায়য়ার করেছে। অন্যনায় প্রতিবাদ করায় সেনাবাহিনীরা আতক করেছে এমন কোনো রাষ্ট্র আমার জানা নাই। কিন্তু বাংলাদেশে সেনাবাহিনীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় প্রতিবাদকারিদের ব্রাশ ফায়ার এবং আতক করছে। এর থেকে কুলাঙ্গারে কাজ কি হতে পারে। এই সেনাবাহিনীরা আমাদের আদিবাসিদের জীবনকে নরকের পরিনত করেছে। এই সেনাবাহিনীরা আমাদের শান্ত পাহাড়কে অশান্তিতে পরিণত করেছে। আমরা সেনা শাসন থেকে মুক্তি চাই। তিন পার্বত্য জেলা থেকে সেনা শাসন সেনাবাহিনী প্রতাহারে জোর দাবি জানায়।
জুম্ম পিপলস নেটওয়ার্ক-কোরিয়ার সাচিব জনক দেওয়ান কোরিয়ান সরকার এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তাদের আবেদনের জরুরিত্বের ওপর জোর দেন।
“আমাদের আরও জোরে আমাদের কণ্ঠস্বর তুলতে হবে।
আমাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, মানবাধিকার রক্ষাকারী এবং বিশ্বজুড়ে সরকারগুলোকে আহ্বান জানাতে হবে এই নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে জবাবদিহি করতে। আমাদের আদিবাসী ভাই-বোনদের পাশে দাঁড়াতে হবে যতক্ষণ না তারা তাদের নিজ মাতৃভূমিতে শান্তি, নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার নিয়ে বসবাস করতে পারে। একসাথে আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি নীরব না থাকার। আমরা ততক্ষণ সংহতিতে দাঁড়িয়ে থাকব যতক্ষণ না পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার এবং সমতা আসে।“
Leave a Reply