পুলিশ সপ্তাহ- ২০২৫।এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য- ‘আমার পুলিশ আমার দেশ বৈষম্যহীন,বাংলাদেশ’।
মোঃ আরিফুল ইসলাম মুরাদ সাংবাদিক ষটাফ রিপোটারঃ
পুলিশ হলো আস্থা,বিশ্বাস আর ভরসার প্রতীক – অন্ধকার রাতে ল্যাম্পপোস্টের মতো,যে আলো সাহস যোগায় !
আপ্তবাক্যটির মতো হতে হলে ল্যাম্পপোস্টের সুইচ কোথায় ,কার বা কাদের হাতে
থাকবে সেটি গুরুত্বপূর্ণ ।
রাস্ট্রের সবচেয়ে জরুরী,গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পুলিশ
একটি হলেও দূর্বল প্রতিষ্ঠান !
অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে পুলিশের কোন বিকল্প কিছু নেই-অপরিহার্য ।
৩১ বছরের সরকারি কর্মী হিসেবে ২৫ বছর পুলিশে ছিলাম।শুরু থেকেই শুনে আসছি নানা রকম ইতিবাচক-নেতিবাচক আপ্তবাক্য- জনগণের বন্ধু, জনতার পুলিশ, আকাশের যত তারা পুলিশের তত ধারা,বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা,পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ ঘা,মাছের রাজা ইলিশ,চাকরির রাজা পুলিশ,পুলিশ তুমি যতোই মারো তোমার বেতন ১১২।রাবনের ভূমিকায় এখন পুলিশ।ভিলেইন ,ঘৃণার পাত্র !
এত মৃত্যু,এত রক্ত,এত লাশ,এত ধ্বংসযজ্ঞের পরও কি পুলিশের শিরদাঁড়া সোজা হবে না ! জানি এবং বিশ্বাস করি এই ধরণের যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মীর অভাব নেই।একসাথে আওয়াজ তুলুন,কাজ হবে ইনশাআল্লাহ। ফিনিক্স পাখির মতো পুনরুত্থানের এই সুযোগ ! দু:সময়ই শক্তিশালী
নেতৃত্বের সৃষ্টি করে ।
রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানেরই দায় আছে।কলঙ্কের,অপকর্মের অভিযোগ অল্পবিস্তর সবার বিরুদ্ধেই আছে।তবে পুলিশই মনে হয় সব অনিয়ম,অন্যায়, অবিচার আর ঘুষ-দুর্নীতির ইজারাদার !
রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে সিস্টেম বা কাঠামোর মধ্যে থেকে নির্ভয়ে কাজ করার সংস্কৃতি চালু করার কোন বিকল্প নেই।কর্তৃপক্ষের অবৈধ বা বেআইনী আদেশ অমান্য করায় যেন কেউ ভিক্টিমাইজ না হয়।দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী বার্তা জরুরী।উদাহরণ সৃষ্টি করা।দুর্নীতি কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী পন্থা – শুরু করতে হবে উপর থেকে,নিচ থেকে নয়। নিয়োগ,পদোন্নতি,পদায়ন হবে মেধা,যোগ্যতা,দক্ষতা এবং জ্যৈষ্ঠতার ভিত্তিতে।সর্বক্ষেত্রে প্রমাণ করতে হবে “ভালো কাজের পুরস্কার,মন্দ কাজের শাস্তি।”
জনগণের চাহিদা অল্প এবং যৌক্তিক – জনবান্ধব, সহানুভূতিশীল,মানবিক পুলিশ চায়।পেশাদারিত্বের সাথে আইনি কাঠামোর মধ্যে থেকে কাজ করবে,সেবা দেবে। সরকারের একমাত্র দৃশ্যমান শক্তি
পুলিশ – পোশাক,অস্ত্র,আইনের বইদ্বারা সজ্জিত এবং বৈধ এবং আইনি ক্ষমতা প্রয়োগের জন্যে রাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ।
ক্ষমতাবানরা চায় পুলিশ আমার হবে,আমার কথা শুনবে।আমি যা বলবো তাই বৈধ,তাই আইন।পুলিশকে বলতে হবে আমি বৈধ আদেশ মানবো,অবৈধ আদেশ মানবো না ; আমি আইনি আদেশ মানবো,বেআইনি আদেশ মানবো না – এটাই সংস্কার ।এই ধরনের সংস্কৃতি চর্চা করে তো এদেশের পুলিশ বেড়ে উঠেনি।আমরা হ্যা সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠেছি,না সংস্কৃতি আমাদের হয়ে উঠেনি।তোয়াজ,তোষামোদ,তদবির,দাসসুলভ আচরণেই অভ্যস্ত আমরা।
প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা,প্রতিষ্ঠান প্রধানের শিরদাঁড়া,রাজনীতির মানই নির্ধারণ করবে পুলিশ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কতটুকু সফল হলো।সাথে ব্যক্তি ,প্রতিষ্ঠানের মনোজগতের পরিবর্তন দরকার ।
সংস্কার,কমিশন,স্বাধীন পুলিশ কমিশন নিয়ে এত কথা হচ্ছে এর শেষ কোথায় ? দিনশেষে রাজনীতিবিদরাই দেশ চালাবে।জনগণই তাঁদের বিদায়
করবে বা রিনিউ করবে।রাজনৈতিকসদিচ্ছা,প্রতিশ্রুতি,অঙ্গীকারই পারে প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে,উজ্জ্বল করতে।
এই যে যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনের পুলিশ প্রধান আর্ট অ্যাসেভেদো পুলিশ নিয়ে কথা বলায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন-এ ট্রাম্পকে মুখ বন্ধ রাখতে বলেছেন ! ওই পুলিশের চাকরি তো যায়নি – রক্ষাকবচ হিসাবে সেদেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার আছে।
একটা ফিল্মের ডায়লগ ‘ডরকো আন্ডারএসষ্টিমেট মাত করো,ডরকো ইজ্জত করো।’ আমার ভাবনার জায়গা থেকে বলি ডরকে জয় করতে না পারলে আর ইজ্জত করতে থাকলে এই মহাপ্রলয় ,সুনামির পুনরাবৃত্তি ঘটবে।সাহস নিয়ে সবাই জন্মায় না ।বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে সাহসের সংক্রমণ ঘটে,সংক্রমিত হয়ে সবাই সাহসী হয়ে উঠে।আশার চর্চা করেই যেতে হবে,আশাবাদী হতে হবে – একদিন পুলিশ জনতার পুলিশ হবে।ল্যাম্পপোস্টের সুইচ সঠিক স্থানে,যোগ্য মানুষের হাতে থাকবে এবং পুলিশ জনগণের পুলিশ হয়ে উঠবে !!
Leave a Reply