সাধারণত অঘ্রান মাসে আমন ধান তোলার সময় বাজারে চালের দাম অনেকটাই কমে আসে। এবার তা হয়নি। আমনের ভরা মৌসুমেও চালের দাম না কমে বরং বেড়েছে। চালের দাম বাড়ার সে ধারা অব্যাহত আছে।
একটু একটু করে দাম ক্রমেই বাড়ছে।
মোটা চালের দামও বাড়ছে, তবে বেশি বাড়ছে সরু চালের দাম।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। দেশি কাটারি (নাজির) চালের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত।
আর মোটা চালের দাম বেড়েছে কেজিতে এক থেকে দুই টাকা পর্যন্ত।
চালের দাম বেড়ে গেলে তা নিম্ন ও নিম্নমধ্যম আয়ের মানুষের জীবনে অনেক বড় প্রভাব ফেলে। দরিদ্র মানুষ ভাতের জোগান থাকলে লবণ-মরিচ দিয়েও দু-এক বেলা পার করে দিতে পারে। কিন্তু চালের আকাল হলে তাদের সামনে আর কোনো পথই খোলা থাকে না।
সে কারণে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য সব সরকারই চেষ্টা চালায়। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। চাল আমদানিতে শুল্ক কমানো হয়েছে। ভারত ছাড়াও কয়েকটি দেশ থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আমদানি করা চাল যথেষ্ট পরিমাণে বাজারে প্রবেশও করেছে।
তার পরও চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়াকে স্বাভাবিক মনে করছে না অনেকেই। অতীতে দেখা গেছে, কিছু মিলার ও পাইকারি ব্যবসায়ীর সিন্ডিকেট চালের বাজারকে অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে নানাভাবে ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমানে বাজারে হঠাত্ করে দাম বাড়ার পেছনে কি সেই সিন্ডিকেটের কোনো ভূমিকা রয়েছে?
অবশ্য মিলারদের বক্তব্য, অন্যান্য চালের দাম অতটা বাড়েনি, যতটা বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। এর কারণ বাজারে এই ধানের অভাব রয়েছে। ফলে তাদের ধানই কিনতে হচ্ছে বেশি দাম দিয়ে। তাঁদের মতে, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে নতুন ধান উঠলে দাম কমে যাবে।
বাজারে সবজির দামে এখনো কিছুটা স্বস্তি আছে। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল এখনো কম মিলছে। দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণেই নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি অস্বস্তিতে আছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ) পূর্বাভাস দিয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ বছর বাংলাদেশে চালের উৎপাদন চার লাখ টন কমে যেতে পারে। এতে চাহিদার তুলনায় ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে এবং বাজারে তার নেতিবাচক প্রভাবই পড়বে।
আমরা মনে করি, দেশে চালের উৎপাদন বৃদ্ধির ওপর আরো জোর দিতে হবে। এর আগে বাজারে চালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি আরো বাড়াতে হবে।
সিন্ডিকেট ও মজুদদারির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। টিসিবির ট্রাক সেল ও ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) মতো অন্যান্য কর্মসূচি চালু করতে হবে। যেকোনো ধরনের কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে।
Leave a Reply