গাজীপুরে নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ‘ভাড়াটে খুনি’ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী ফরিদা বেগম মুক্তা।
তিনি বলেছেন, “কিলার ভাড়া করে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে যারা টাকা দিয়ে ইন্ধন জুগিয়েছে, তাদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।”
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গাজীপুর প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের তিনি এ কথা বলেন। তবে এ দাবির বিষয়ে আর কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ফরিদা বেগম মুক্তা বলেন, “সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং সিসিটিভি ফুটেজসহ সব তথ্য যেভাবে আপনারা সামনে এনেছেন, আমি ও আমার পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।
“আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই আমার স্বামীর হত্যাকারীদের অপরাধ প্রকাশ হয়েছে। না হলে এটি হয়তো সাগর—রুনি হত্যাকাণ্ডের মতো প্রমাণ হারিয়ে যেত। আজ আপনারা পাশে আছেন বলেই আমি এখনও কিছুটা শক্ত আছি।”
এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানের সঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে জরুরি সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৭ দাবি জানিয়েছেন মুক্তা।
তার দাবিগুলো হলো— সাংবাদিক তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িত সব আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে। ১৫ দিনের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিতে হবে। মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে ৯০ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া মামলার বাদী, ঘটনাস্থলের সব স্বাক্ষী, তুহিনের পরিবার ও প্রতিদিনের কাগজ সম্পাদকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত খুনিদের কারাগারে রাখা।
দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করায় তুহিনের পরিবার ও সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। পাশাপাশি সারাদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আলাদা হটলাইন চালু করার দাবিও জানান তিনি।
গত ৭ অগাস্ট রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে (৩৮)। এ ঘটনায় মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গাজীপুরে প্রকাশ্যে এক ব্যক্তির ওপর হামলা-কোপানোর ঘটনার ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিক তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঘটনার সময়ের আশেপাশের সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে জানিয়েছিলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল ইসলাম।
তুহিন দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
এ ঘটনায় নগরীর বাসন থানায় দুটি মামলা হয়েছে। একটি মামলার বাদী হয়েছেন তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম। অপর একটি মামলার বাদী, তুহিন হত্যার আগে সংগঠিত আরেকটি হামলার ঘটনায় আহত বাদশা মিয়ার ভাই। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক মো. খায়রুল আলমসহ তুহিনের পরিবারের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply