মো: রাসেল মোল্লা
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালিগঞ্জ সড়কের দক্ষিণ নবগ্রাম থেকে মাঝিনা নদীরপাড় পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ধীরগতিতে যাত্রীদের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। পরশি-মুড়াপাড়া জিসি ভায়া রূপগঞ্জ সড়ক ১৪ দশমিক ২৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ও লিংক রোড হিসেবে ফজুরবাড়ি থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটারসহ ১৮ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে। সড়ক নির্মাণে ধীরগতি থাকায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। এলজিইডির এ প্রকল্পের বাঘবের থেকে ফজুরবাড়ি ও ফজুরবাড়ি থেকে কাঞ্চন সেতু পর্যন্ত নির্মাণকাজ এগিয়ে গেছে। কিন্তু মুশুরী ফজুরবাড়ি থেকে রূপগঞ্জ খেয়াঘাট ও হাবিবনগর এলাকায় সৃষ্ট গর্তে হাঁটু সমান পানি জমে সড়কে চলাচল একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ২৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কের ৬টি কালভার্ট নির্মাণ কাজও চলছে ধীরগতিতে। এলাকাবাসীর আবেদন-নিবেদনেও কোন কাজে আসছে না।
সরেজমিনে জানা গেছে, এ সড়কের দক্ষিন নবগ্রাম, ভিংরাবো, হাবিবনগর, ইছাখালী, ফজুরবাড়ি এলাকার বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি এখন চরমে। তবে সড়ক নির্মাণে জমির জটিলতা, সড়কের মাঝখানে ৩০-৩২টি বৈদ্যুতিক খুঁটি থাকায়, বাঘবের এলাকার বিএনপি নেতাকর্মীদের জমির ক্ষতিপূরণ বিল না দেওয়া ও অতিবর্ষণে কাজের বিলম্ব হচ্ছে বলে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান দাবি করেছে। এ প্রকল্পে ১৮ দশমিক ৬২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য, ২৪ ফুট প্রস্থ ও উভয় পাশে তিন ফুট করে ছয় ফুট ফুটপাত সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
এছাড়া চারটি ইউড্রেন নির্মাণ, ৪ দশমিক ৫০ কিলোমিটার বক্স ড্রেইন নির্মাণ, দুইটি বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ১২ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এসব কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা। এ সড়ক নির্মাণে ২০২৩ সালের ৭ জুন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড দায়িত্ব পায়। তারা একই বছর ২৯ মে নির্মাণকাজ শুরু করে। ২০২৪ সালের ২৮ মে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। পরে জমির জটিলতা ও অতি বর্ষণসহ নানা প্রতিক‚লতায় নির্মাণকাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়। সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। এরপরেও নানা জটিলতায় নির্মাণ কাজের সময় বৃদ্ধি করা হয়। সে অনুযায়ী গত ৩০জুন নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলায় চলাচলে মানুষের এখন চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে রূপগঞ্জ থানা ভবনের দক্ষিণ পাশ থেকে মুশুরি কবরস্থান পর্যন্ত এ সড়কে চলাচল একবারেই অনুপযোগী।
রাতের আঁধারে মালবাহী ভারী যান চলাচল করায় সড়কটিতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে পানি জমে থাকে। কোথাও হাঁটু সমান পানি আর কাদা মাটিতে পরিণত হয়। তখন যানবাহন চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এ সময় চরম ভোগান্তিতে পড়ে যাত্রীরা।
রূপগঞ্জের দক্ষিণ নবগ্রাম, মাইফরাসপাড়া, ইছাখালী, পাড়াগাঁও, বড়ালু, ডাক্তারখালী এলাকায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সৃষ্ট গর্তে কোথাও হাঁটু সমান পানি। প্রতিদিনই হালকা পরিবহন উলটে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। রাস্তার দুই পাশ দিয়ে পথচারীরা চলাচল করতে পারছে না। পাকা রাস্তার মাঝখানে কাঁদার ছড়াছড়ি। তাতে এলাকাবাসীর দুর্ভোগ বেড়েই চলছে। পাথরবাহী লরি ও মালবাহী ট্রাক অবাধে চলাচল করার কারণে সড়কের এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। এতে লোকজনের ভোগান্তিও চরমে পৌঁছেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ডেমরা-রূপগঞ্জ-কালিগঞ্জ সড়ক সংস্কার কাজ ঠিকাদারির গাফিলতি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরহীনতায় ভোগান্তি বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতিনিয়তই এ সড়কে ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। ব্যাহত হচ্ছে এ সড়কে যাতায়াত করা শিক্ষার্থীদের পাঠদান। দ্রæত সড়কের সংস্কার কাজ শেষ করার দাবি করেন এলাকাবাসী।
ন্যাশনাল ডেভেলাপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড এর দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
রূপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আকতার হোসেন বলেন, নান প্রতিক‚লতায় সড়ক নির্মাণ কাজ ব্যাহত হলেও শিগগিরই দ্রæত গতিতে কাজ চলবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজ দ্রæত সম্পূর্ন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই এ সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Leave a Reply