রনজিৎ সরকার রাজ দিনাজপুর প্রতিনিধি:
মবুধবার ৩ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১১ টায় দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পরমেশপুর গ্রামে ঢেপা নদীর তীরে ১৫ গ্রামের ১০ হাজারের ঊর্ধ্বে মানুষের দুর্ভোগ নিরসনে স্বপ্নের সেতু নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ন সচিব( নগর উন্নয়ন ১অধিশাখা) আবুল খায়ের মোহাম্মদ হাফিজুল্লাহ্ খান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মোঃ রফিকুল ইসলাম, দিনাজপুর পল্লী সড়কের গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক আবু জাকির সিকান্দার,জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাসুদুর রহমান, কাহারোল উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ ফিরোজ আহমেদ প্রমূখ।
জানা যায় দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ৬ নং রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পরমেশপুর গ্রামের আশ্রমপাড়া ঘাট এলাকায় নদী পারাপারে শুকনা মৌসুমে স্থানীয় বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো। বর্ষা মৌসুমে দুটি নৌকা, নদীর দুই পাড়ের ১৫টি গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষ সেখানে চলাচল করেন। মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল পার হয় দুই সহস্রাধিক। তবে পারাপার হওয়া লোকজনের ঘাট ইজারাদারকে দৈনিক ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
প্রায় ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্য ঘাটের ইজারাদার সুধীর চন্দ্র রায় প্রায় ১৮ বছরের বেশি সময় ধরে ঘাট ইজারা নিচ্ছেন তিনি। তিনি জানান এলাকার মানুষ সবাই পরিচিতজন, প্রতিদিন ভাড়া চাওয়া যায় না। অনেকে টাকা দেয় আবার কেউ দেয় না।
তবে আর খেয়াঘাট করতে চান না তিনি। সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় আমরা অত্যন্ত খুশি এলাকার মানুষও অনেক খুশি হয়েছেন তিনি জানান ।
ঢেপা নদীর দৈর্ঘ্য ৪০ কিলোমিটার। স্থানভেদে ১০০-১৫০ মিটার চওড়া।খানসামা উপজেলার জয়ন্তীয়া এলাকায় আত্রাই নদী থেকে ঢেপার উৎপত্তি, এটি বীরগঞ্জ-কাহারোল-বিরল উপজেলা হয়ে সদর উপজেলার রাজাপাড়া ঘাট এলাকায় পূনর্ভবা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে।পরমেশপুর ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায় নদীর এক পাড় থেকে আরেক পাড়ের দূরত্ব প্রায় এক হাজার ফুট। নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আড়াআড়িভাবে বাঁশের বাতা দিয়ে ৪০০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি সাঁকো তৈরি করে মানুষ যাতায়াত করে। এই ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী, অসংখ্য জনসাধারণ,মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকে ১০-১২টি তিন চাকার ভ্যান পারাপার হওয়া লোকজনকে গন্তব্যে পৌঁছে দেন তাঁরা।
ঘাটপাড়ের মানুষ জানান, ভোর হতে রাত ১২টা পর্যন্ত ঘাট দিয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। নদীর দুই পাড়ে এলজিইডি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করেছে। ২৮০ মিটার এই সেতু নির্মাণের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদটি প্রচার হলে ইতিমধ্যে মাটি পরীক্ষা, ড্রইং ও নকশার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নদীর পূর্ব পারে পরমেশপুর গ্রামের একাংশ, গড়নুরপুর, ইটুয়া, তেরমাইল, দশমাইল ও ফার্মেরহাট গ্রাম। রয়েছে নিত্যানন্দ দাতব্য চিকিৎসালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীপাড়ের সঙ্গে লাগোয়া আশ্রমপাড়া। আর পশ্চিমে পরমেশপুর গ্রামের একাংশ, ইশ্বরগ্রাম, ফুলতলা, মোল্লাপাড়া, মুটুনি, ডাঙ্গাপাড়া ও ফেরুসাডাঙ্গা গ্রাম। পশ্চিমপারে নদীর সঙ্গে লাগোয়া পরমেশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।এসব গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষ ঘাট দিয়ে চলাচল করেন। গত কয়েক বছরে বাঁশের সাঁকো পারাপারে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। একটি সেতুর জন্য দীর্ঘদিনের অপেক্ষা পর এখন স্বপ্নের সেতু হওয়ার স্বপ্ন দেখছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
ঘাট পারাপারে মানুষ আরো জানান, ঘাটের পূর্বপাড়ের মানুষকে যদি উপজেলায় যেতে হয়, তাহলে কান্তনগর দশমাইল, কান্তনগর মোড় হয়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। সেতুটি হলে ৬ কিলোমিটার রাস্তা কমবে। আবার পূর্বপাড়ের মানুষকে জেলা শহর কিংবা সৈয়দপুর, বীরগঞ্জ যেতে হলে ১৬-১৮ কিলোমিটার যেতে হয়। সেতু হলে পূর্বপাড়ের মানুষেরও রাস্তা কমবে ৮ কিলোমিটার।
এলাকার অনেকে বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘাট এলাকায় লোকজন থাকেন। তবে রাত বেশি হলে অনেক সময় ভ্যান থাকে না তখন যাত্রীদের ভীষণ ভোগান্তিতে পড়তে হয় । প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ হেঁটে মুটুনি বাজারে যেতে হয়। পরমেশপুর গ্রাম দুই ভাগের মাঝে পড়েছে ঢেপা নদী। নদীর পূর্বপাড়ে আশ্রমপাড়ায় ৮০টি পরিবারের বসবাস রয়েছে । সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে এলাকার জনবসতি ও দূরদূরান্তের জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম ঠিকাদারের উদ্দেশ্যে বলেন, এই সেতুটি এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেতু। নির্মাণ ক্ষেত্রে সকল ধরনের গুণগত মান বজায় রাখতে হবে, কোন প্রকার দুর্নীতি হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।
পরমেশপুর গ্রামের সাবেক ইউনিয়ন মেম্বার নজরুল ইসলাম বলেন দীর্ঘদিন যাবত অনেক জনপ্রতিনিধিদের কাছে এলাকার মানুষ সেতু করে দেওয়ার জন্য ঘুরেছেন কিন্তু তারা সেটি আমলে নেয়নি, এখন এই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হলে ১৫ টি গ্রামের মানুষ স্বপ্নের সেতু মনে করছে।
সেতু নির্মাণ বিষয়ে কাহারোল উপজেলা প্রকৌশলী ফিরোজ আহমেদ বলেন,পরমেশপুর এলাকায় ঢেপা নদীর ওপরে এলজিইডি থেকে ২৮০ মিটার সেতু ৩৩ কোটি ২২ লাখ ৩২ হাজার ৪৬৭ টাকা বরাদ্দে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মাটি পরীক্ষা, ড্রইং ও নকশার কাজ সম্পন্ন শেষে সেতু নির্মাণের কাজ উদ্বোধন হয়েছে ।
Leave a Reply