স্টাফ রিপোর্টারঃ
গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলাজুড়ে চলছে ইট পোড়ানোর ধুম। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ডজনখানেক ইটভাটায় এখন পুরোদমে চুলায় আগুন জ্বলছে। অথচ এসব ভাটার মধ্যে একটির বাদে বাকিগুলোর নেই কোনো বৈধ পরিবেশ ছাড়পত্র। অভিযোগ উঠেছে, গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) বোনারপাড়া জোনাল অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে এসব অবৈধ ভাটায় বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটার চিমনি থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। চিকিৎসকদের মতে, এসব ধোঁয়া ও ধূলিকণা বায়ুদূষণ বাড়িয়ে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখ জ্বালাপোড়াসহ নানা রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে।
সাঘাটা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এসব ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ও কয়লা ব্যবহারের ফলে আশপাশের বনজ গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলের জমি ও মাটির উর্বরতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভাটার ধোঁয়ায় নির্গত কার্বন ডাই—অক্সাইড ও সালফার ডাই—অক্সাইডসহ ক্ষতিকর গ্যাসগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যও দায়ী। ভাটা মালিকদের সূত্রে জানা যায়, এসব কয়লা গাবতলী, সিলেট ও যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন ভাটাগুলোতে অসাধু উপায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। এসব ভাটার নামে মিটার নম্বর দিয়ে নিয়মিত বিল কাগজ সরবরাহ করছে বোনারপাড়া জোনাল অফিস। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক জানান, সংযোগ নিতে গেলে কিছু খরচ করতেই হয়, না দিলে কাজ হয় না।
উপজেলার কয়েকজন ভাটা মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিভিন্ন মহল ম্যানেজ করেই ভাটা চালাতে হয়।
এ বিষয়ে বোনারপাড়া জোনাল অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. জালাল উদ্দীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যে সময় এসব ভাটায় সংযোগ দেওয়া হয়েছিল, তখন আমি এখানে ছিলাম না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গাইবান্ধা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার মুঠোফোনে বলেন, অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে, অচিরেই আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।
সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মো. আল কামাহ্ তমাল বলেন, অচিরেই অবৈধ ও পরিবেশ ছাড়পত্রবিহীন ইটভাটার বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করা হবে। কেউ রেহাই পাবে না।
স্থানীয় সচেতন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও শিক্ষক অমিত রায়হান বলেন, পরিবেশ রক্ষায় এসব অবৈধ ইটভাটা দ্রুত বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
Leave a Reply