প্রতিবেদন: আহসান হাবীব বাপ্পি
বাংলাদেশ বেতারের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘দর্পণ’ আজ উদযাপন করছে তার ৪৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এই অনুষ্ঠান হয়ে উঠেছে দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও মানবিকতার এক জীবন্ত দলিল।
বাংলাদেশ বেতারের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক এই জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘দর্পণ’ ১৯৮৩ সালের ১ নভেম্বর যাত্রা শুরু করে। প্রথম উপস্থাপক ছিলেন কাজী ফারুক, পরে যুক্ত হন কৌশিক আহমেদ — যাঁরা অনুষ্ঠানটির ভিত্তি ও দিকনির্দেশনা স্থাপন করেন।
১৯৮৮ সাল থেকে একটানা উপস্থাপনায় আছেন অত্যন্ত অভিজ্ঞ উপস্থাপিকা রওনক জাহান, যিনি দর্পণকে ভালোবাসেন নিজের সন্তানের মতো। তিনি বলেন, “দর্পণ আমার সন্তানের মতো। আমি এটিকে যেমন ভালোবাসি, তেমনি এটিকে বড় হতে দেখেছি। আমৃত্যু দর্পণের সঙ্গে থাকতে চাই।” রওনক জাহানের সাথে জুটি বেঁধে দীর্ঘদিন উপস্থাপনা করেছেন বর্ষীয়ান উপস্থাপক শেখ শফি আহমেদ। তিনি এখন বার্ধক্যজনিত কারণে উপস্থাপনা থেকে দূরে আছেন।
বর্তমানে অনুষ্ঠানটি আরও যারা উপস্থাপনা করছেন তারা হলেন, আহসান হাবীব বাপ্পী, তামান্না সিদ্দিকী, ফারহানা খান পূরবী, শাহিনূর রহমান, শামিম আহমেদ, মইনুল ইসলাম, উপমা শিরিন ও আনিসূর রহমান সাব্বির। বিভিন্ন জনপ্রিয় পর্ব উপস্থাপন করছেন কামাল মিনা, এম এ ওয়াহাব, বৈশাখী খাতুন, মিল্কি সহ আরও অনেকে, যারা নিজেদের নিষ্ঠা ও সৃজনশীলতায় দর্পণকে সমৃদ্ধ করে তুলছেন।
এখন দর্পণ গ্রন্থনা করছেন নুসরাত হাবীব, মালিক ফারিবা তাবাসসুম, তাপসী মনিরসহ আরও কয়েকজন শ্রোতানন্দিত লেখক।
উল্লেখযোগ্য পর্বগুলোর মধ্যে রয়েছে — এইদিন, ঐতিহ্যের সন্ধানে, রূপালী সংস্কৃতি, প্রিয় মানুষ প্রিয়জন, অদম্য বীর, মায়ের ডাক, অন্তরালের কথা, পত্রালাপ ও ই-আলাপন।
দর্পণ সপ্তাহে চারদিন — শুক্রবার, শনিবার, রবিবার ও বুধবার সকাল সাড়ে আটটায় ৩০ মিনিটব্যাপী সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। বর্তমানে অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করছেন দেলোয়ার হোসেন, আর প্রতিদিনের সম্পাদনার দায়িত্বে রয়েছেন মোঃ ওয়াকিবুর রহমান।
আজকের বিশেষ জন্মদিনের আয়োজনটি উপস্থাপনা করেছেন রওনক জাহান ও মোঃ শাহিনূর রহমান। জন্মদিনের আড্ডায় দর্পণ পরিবার বিশেষ পর্ব উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশ বেতারের অভিজ্ঞ ও দক্ষ উপ-আঞ্চলিক পরিচালক শাহজাহান জামান চৌধুরী।
দর্পণের ৪৩ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ বেতারের মহাপরিচালক এএসএম জাহীদ বলেন—
“দর্পণ কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দর্পণ আমাদের জাতির যাত্রাপথ, সংগ্রাম, অর্জন ও গৌরবের প্রতিফলন তুলে ধরছে। এই অনুষ্ঠান বেতারের মানসম্মত সম্প্রচারের এক অনন্য উদাহরণ, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সাংস্কৃতিক চেতনা জাগিয়ে তুলছে। আমি বিশ্বাস করি, দর্পণ ভবিষ্যতেও তার ঐতিহ্য ধরে রেখে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও মানবতার গৌরবগাথা।”
বাংলাদেশ বেতার ঢাকা কেন্দ্রের পরিচালক মোঃ বশিরউদ্দিন বলেন—
“দর্পণ আমাদের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সংরক্ষণে এক অনন্য ভূমিকা রাখছে। আমরা চাই, এই অনুষ্ঠান আরও জনপ্রিয় ও সময়োপযোগী হয়ে উঠুক। দর্পণের মানোন্নয়ন এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।”
দর্পণের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক শাবানা হক ও প্রযোজক দেলোয়ার হোসেন বলেন, “দর্পণ আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি। আমরা চাই প্রতিটি পর্ব হোক আরও প্রাণবন্ত, তথ্যসমৃদ্ধ ও সময়োপযোগী—যাতে শ্রোতারা এই অনুষ্ঠান থেকে পান আনন্দ, অনুপ্রেরণা ও আত্মার পরিতৃপ্তি।
দৌলতপুর, মানিকগঞ্জের নিয়মিত শ্রোতা মেহেদী হাসান মামুন সিএসবি নিউজ USA-কে বলেন—
“বাংলাদেশ বেতারের নিয়মিত শ্রোতা হিসেবে শিক্ষণীয় ও মননশীল ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হিসেবে প্রথম যার প্রেমে পড়েছিলাম, সে হলো ‘দর্পণ’। ছোটবেলায় সকাল ৮টা ৩০ বাজলেই বাড়িতে বাজত দর্পণের সুরধ্বনি— যেন দিন শুরু হত ঐ সুরের সাথেই। যেখানেই থাকতাম, ছুটে যেতাম রেডিওর পাশে বসে থাকতে, পুরো আধা ঘণ্টা যেন এক অন্য জগতে হারিয়ে যেতাম। সময় বদলেছে, বয়স বেড়েছে, কিন্তু দর্পণের প্রতি ভালোবাসা আজও অটুট। এখনো শ্রোতা, লেখক ও অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমি ‘দর্পণ’-এর সাথেই আছি — গর্বের সঙ্গে।”
এছাড়াও ওয়াসিয়ুর রহমান মিন্টু (সিরাজগঞ্জ), এস এম ছবেদ আলী (ঝিনাইদহ), পারভীন আক্তার (মানিকগঞ্জ), মোঃ রাসেল শেখ (মানিকগঞ্জ), ফকির শফিক হাসান টুটুল (ফরিদপুর), হোসাইন মূসা (নরসিংদী), শাহাদাত হোসেন (কিশোরগঞ্জ)সহ আরও অনেকেই দর্পণের জন্মদিন উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দর্পণ বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে অটল বিশ্বাসে। সময়ের আয়নায় দর্পণ আজও দীপ্ত, শ্রোতাদের হৃদয়ে জাগিয়ে রাখছে মাটির গন্ধ, মানবতার উষ্ণতা ও চেতনার আলো। দারুণ! দর্পণ চিরঞ্জীব হোক – এটাই সকলের হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা।
Leave a Reply