নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানী ঢাকার সদরঘাটের ঐতিহ্যবাহী হক মার্কেটের ৭৩ জন দোকানদার আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা বারোটায় এক আবেগঘন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন। তাদের একটাই দাবি—যে জায়গায় তাদের দোকান ছিল, সেই বহুতল ভবনের প্রথম ও তৃতীয় তলায় দোকান বরাদ্দ ফিরিয়ে দিতে হবে।
দীর্ঘ ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে এই মার্কেটে দোকান পরিচালনা করে আসছেন ব্যবসায়ীরা। বক্তারা জানান, ১৯৬২ সাল থেকে তাদের পিতা ও পিতামহরা হক মার্কেটের পজিশন নিয়ে ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। কিন্তু ২০২১ সালে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পুরোনো টিনসেট মার্কেট ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন দোকানদারদের দুই বছরের জন্য অস্থায়ীভাবে অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়, এবং জমিদার আদম তমিজি হক প্রতিশ্রুতি দেন যে, ভবন নির্মাণ শেষে তাদেরকে প্রথম ও তৃতীয় তলায় দোকান বরাদ্দ দেওয়া হবে।
কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরও প্রতিশ্রুত দোকান তারা এখনো ফিরে পাননি। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীরা বলেন, “আমরা এখন ফুটপাতে দোকান বসিয়ে কোনোভাবে দিন পার করছি। আমাদের জীবন এখন মানবেতর। অথচ আমাদের ঘাম ও শ্রমে গড়া এই মার্কেটের দোকান আজ আমাদের হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
দোকানদারদের অভিযোগ, নির্মিত ভবনে তাদের দোকান বরাদ্দের পথে ডেভেলপার সংস্থাই এখন প্রধান বাধা। তারা নানা অজুহাতে বরাদ্দ দিতে গড়িমসি করছে।
এদিকে, বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। জজ কোর্ট ইতোমধ্যে দোকানদারদের পক্ষে তিনটি রায় প্রদান করেছেন। উচ্চ আদালত উভয় পক্ষকে সহনশীলতা ও স্থিতিশীলতা বজায় রেখে এক বছরের মধ্যে বিষয়টি সুন্দরভাবে মীমাংসা করার জন্য বলেছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন হক মার্কেট ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সহ-সভাপতি হাজী মো. চুন্নু মোল্লা, মো. আনোয়ার হোসেন, সদস্য মো. জসিম উদ্দিন, মো. হাফিজুল ইসলাম, মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. কামাল উদ্দিন, মো. নাদিম আহমেদসহ প্রায় ৭৩ জন দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী।
একজন প্রবীণ দোকানদার কণ্ঠ ভারী করে বলেন, “আমাদের বাবারা এই মার্কেটে জীবন কাটিয়েছেন। এখন আমরা শুধু চাই, সেই জায়গায় আবার ফিরতে — আমাদের দোকানটুকু ফেরত পেতে চাই।” দোকানদাররা সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন— যেন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তারা কোনো ঝামেলা করতে চান না, বরং নিজেদের ঘাম-রক্তে গড়া দোকান ফেরত চান। ভূমির মালিক আদম তমিজি হকের অঙ্গীকার অনুযায়ী নিজ নিজ দোকান বরাদ্দ পেতে চান।
হক মার্কেটের দোকানদারের আর্তি এখন একটাই — ‘আমরা আমাদের দোকান ফেরত চাই।’
Leave a Reply