স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :
বাংলার লোকসংগীতের প্রাণ, লালনকন্যা খ্যাত কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন চলে গেলেন না ফেরার দেশে। শনিবার রাত সোয়া ১০টায় রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। বয়স হয়েছিল মাত্র ৭৩ বছর। দীর্ঘদিন কিডনি জটিলতায় ভুগে তিনি শেষ পর্যন্ত হার মানলেন মৃত্যুর নির্মম গ্রাসে।
যে কণ্ঠে বাংলার প্রাণস্পন্দন, যে কণ্ঠে লালনের দর্শন ও মরমিয়া সুর ছড়িয়ে পড়েছিল দিগন্ত থেকে দিগন্তে, সেই কণ্ঠ আজ চিরতরে স্তব্ধ। ফরিদা পারভীনের প্রস্থান শুধু একজন শিল্পীর মৃত্যু নয়—এটি বাংলার সংস্কৃতির বুকচেরা ব্যথা, এক অপূরণীয় শূন্যতা।
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়ায় জন্ম নেওয়া এই মহীয়সী শিল্পী মাত্র ১৪ বছর বয়সে সংগীতজীবন শুরু করেন। নজরুলগীতি ও দেশাত্মবোধক গান গেয়েও প্রশংসা কুড়িয়েছেন, তবে লালনগীতিতেই পেয়েছেন সর্বোচ্চ আসন। একুশে পদক (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩), এবং জাপান সরকারের ‘ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার’ পুরস্কার (২০০৮)—এসব সম্মান তার কণ্ঠের মহিমার সাক্ষ্য বহন করে।
আজ বাংলার গান নিঃসঙ্গ, বাংলার সংস্কৃতি কাঁদছে। লালনের গান যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মের হৃদয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন, সেই ফরিদা পারভীন চলে যাওয়ায় জাতি শোকে নিমজ্জিত। তার কণ্ঠে লালন ছিল শুধু গান নয়—ছিল বেদনা, ছিল দর্শন, ছিল আত্মার আর্তি।
তার চলে যাওয়া বাঙালির জন্য এক চিরস্থায়ী ক্ষত হয়ে থাকবে।
Leave a Reply