শারীরিকভাবে সক্ষম নয়, এমন কাউকে যাতে হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে পাঠানো না হয়, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে বার্তা দিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘হজ ও উমরাহ ফেয়ার ২০২৫’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শারীরিকভাবে সক্ষম না হলে হজে গিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়, সে কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “গতবার এমন হাজি গেছেন, যে হাজির পা নাই। জামাইরও পা নাই। বউয়েরও পা নাই। কেন আপনি তাকে অনুমোদন দিলেন? সে উমরাহ কীভাবে করবে?”
উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “আরেকজনের পায়ের নিচে সিরোসিস। মারাত্মক চর্মরোগ; উঠতে পারে না। এজেন্সির লোকেরা তাকে ফেলে চলে গেছে। আমরা আবার লোক দিয়ে তার হজের আরকান-আহকাম ঠিক করেছি।
“একজনকে নিয়ে গেছে, ৮২ বছর বয়স। মানসিক রোগী। এ মানুষটা হজের আগেই হারিয়ে গেছে। আমরা পাই নাই। সবার সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ পায় নাই। এর আগে পাহাড়ের উপর এক হাজির কংকাল পাওয়া গেছিল।”
উপদেষ্টা বলেন, “কেন তাকে পাঠাচ্ছেন আপনারা? পয়সার জন্য? আমরা এবার খুব কঠোর হচ্ছি, সিভিল সার্জনের মাধ্যমে হাবের সাথে পরামর্শক্রমে ফিটনেস না থাকলে আমরা তাদেরকে নেব না।
“যারা শারীরিকভাবে সক্ষম আছে, তাদের দেবেন। না হলে ওই মানুষটা হজ করতে পারবে না। আমাদের বিব্রত হতে হয়।
হজ পালনে নানা সমস্যা নিয়ে সৌদি মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “আলোচনা করেছি ক্যাটারিং সার্ভিসটা যাতে বাতিল করা হয়। বাংলাদেশি হাজি সাহেবরা সৌদি আরবের খাবার খেতে অভ্যস্ত নয়। সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে আলাপ হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আরও কিছু সমস্যা আছে। আমি সৌদি সরকারের হজ ও উমরাহ মন্ত্রীকে বলেছি, মিনা, মুজদালিফা, আরাফাতে টয়লেটের সংখ্যা কম। হাজিদেরকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। জায়গা আছে, আপনারা তৈরি করে দেন। আপনারা তো আমাদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছেন। আমিও দিচ্ছি টাকা। বানান।
হজ পালনে গিয়ে হাজিদের আবাসন সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খালিদ হোসেন বলেন, “যে পরিমাণ বেডের জায়গা দিয়েছে, এর মধ্যে একটা মানুষ চিৎ হয়ে ঘুমানোর সুযোগ নেই। আমি সৌদি মন্ত্রীকে বললাম। তিনি একটু আশ্চর্য হলেন। সচিবকে বললেন, এটা দেখ। আমরা দেখি এটাকে আরও বড় করা যায় কিনা।
অন্যান্য সমস্যার কথা তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, “মুজদালিফাতে পানি থাকে না শেষ রাতে। আমি অযু করেছি মিনারেল ওয়াটার দিয়ে। এটাও আমি ওনার দৃষ্টিতে এনেছি। আরও যত সমস্যা আছে, আপনারা আমাকে পরামর্শ দেবেন, আমরা তাদেরকে কূটনৈতিক চ্যানেলে, পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করব।”
এজেন্সি মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নাই। আমরা একে-অপরের পরিপূরক। আমরা এক পরিবারের মত হয়ে একটা টিম স্পিরিট নিয়ে কাজ করব।
“সৌদির ডেডলাইন আমাদেরকে ফলো করতে হয়। তারা একটা তারিখ দেয়, গোটা দুনিয়ার জন্য। না হলে অ্যাপ বন্ধ করে দেয়। এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
হজের বিমানভাড়া নির্ধারণের জন্য কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বিমানের সাথে যখনই কথা বলব, হাবের প্রতিনিধি রাখব। এবং খোলামেলা আলোচনা করব। আমার মন্ত্রণালয়ে হজ এবং উমরাহ নিয়ে যদি আমার কোনো কর্মকর্তা এক টাকা ঘুষ খায়, আমরা তাকে ফাঁসিতে ঝোলাব।
“আমার কোনো স্টাফ যদি হজ ক্যাম্প থেকে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত কোনো এজেন্সির কাছ থেকে টাকা নেয়, তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।”
হজযাত্রীরা যেন জর্দা, তামাক, সিগারেট নিয়ে সৌদি আরবে না যান, সেই আহ্বান জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “এগুলো আমাদের দেশে মাদক হিসেবে ধরা না হলেও সৌদি আরবে ধরা হয়৷ এগুলো আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।
মধ্যসত্ত্বভোগীদের হাত থেকে হজ ব্যবস্থাপনা মুক্ত রাখতে হাবের (হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) সহায়তা চান তিনি।
Leave a Reply