মোয়াজ্জেম হোসেন, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)প্রতিনিধি : উন্নয়নের বৈষম্যে আবারও বরিশাল পিছিয়ে পড়ছে। চলতি মাসে জাতীয় একনেকে পাশ হওয়া ১৬টি প্রকল্পের একটিও বরিশালে পড়েনি। একনেকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামকে। প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে অর্ধেকের বেশি চট্টগ্রাম উন্নয়নে বরাদ্দ প্রদান করেছে বর্তমান সরকার। এমনকি বরিশাল বিভাগের উন্নয়নে বড় প্রকল্প পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় অবস্থিত পায়রা সমুদ্র বন্দর নিয়ে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড.ওয়াহিদউদ্দিন মাহামুদের বিরুপ মন্তব্যে করেন। এতে করে বরিশালের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ২০ এপ্রিল জাতীয় একনেকের বৈঠকে তিনি পায়রা সমুদ্র বন্দরকে খাল বন্দর বলে মন্তব্য করেন। চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতা থাকা সত্বেও বে টার্মিনাল তৈরিতে ১৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে পয়ঃনিষ্কাশনে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় একনেকে প্রকল্প না থাকায় বরিশাল- কুয়াকাটার ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিকবিদরা নানা কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। বরিশাল বাসির এখন একটাই দাবি ভাঙা টু কুয়াকাটা মহাসড়ককে ৬ লেনে উন্নিত করা। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আরো গতিশীল করতে সরকারের কাজ করা এবং ভোলার গ্যাস পাইপ লাইনের মাধ্যমে এনে সরবরাহ করা। চীনের আধুনিকায়নের একটি হাসপাতাল বরিশাল স্থাপন করা এবং বিমান বন্দরকে আধুনিকায়ন করা।
সম্প্রতি পায়রা সমুদ্র বন্দর নিয়ে সরকারের এক উপদেষ্টার বিরুপ মন্তব্য নিয়ে পটুয়াখালী কলাপাড়াসহ বরিশালের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বক্তব্যের নিন্দা জানাচ্ছেন এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তাদের মতে জমি ভিটা সব হারিয়েছি আমরা। পায়রা বন্দরসহ ৩টি তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কয়েকটি মেগা প্রকল্প এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এসে এ ধরনের স্বড়যন্ত্র কিছুতেই মানতে পারছেননা সম্পদ হারানো জনগণ এবং সাধারণ মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, পায়রা সমুদ্র বন্দরের ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ১ম টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষ। পাশাপাশি মাদার ভেসেল থেকে পন্য খালাসের পর পরিবহনের জন্য ৬ লেনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এছাড়াও অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে।
পায়রা সমুদ্র বন্দরের একাধিক সূত্র জানান, শুরু থেকে বন্দর উন্নয়ন ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের অন্য দুটি সমুদ্র বন্দর পুরাতন। মাত্র ৯ বছরের বন্দরের ১০০ বছরের অধিক সময়ের তুলনার করলে সেটা ঠিক হবে না।
নাম প্রকাশ না শর্তে পায়রা বন্দর এক কর্মকর্তা জানান পায়রা সমুদ্র বন্দর ঘিরে সব ধরনের ষড়যন্ত্র এ অঞ্চলের মানুষ মোকাবেলা করবে।
ভূমি অধিগ্রহণে ভিটামাটি হারানো ব্যাবসায়ী রেহান উদ্দিন রেহান বলেন, বাড়ি ঘর এবং জমি হারিয়েছি। যা ক্ষতি হওয়ার তাতো হয়েছে। কিন্তু কোন কারণে বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ হলে এ অঞ্চলের মানুষ সবই হারাবে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাজী হুমায়ুন সিকদার বলেন, সরকারের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের এ ধরনের বক্তব্যকে এ অঞ্চলের মানুষ মেনে নিতে পারেনি। তিনি পায়রা সমুদ্র বন্দরকে খালের সাথে তুলনা করেছেন। যদি এই বন্দর খাল হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে এখানে মাদার ভেসেল সরাসরি জেটিতে ভিড়ছে।? উপদেষ্টার উচিৎ এসে পায়রা সমুদ্র বন্দর ঘুরে দেখা।তিনি আরও বলেন, পায়রা বন্দর নিয়ে যদি কেউ স্বড়যন্ত্র করে এই এলাকার সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে কলাপাড়া বিএনপি তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ প্রতিবাদ করবে।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি পরিচালক জি এম আতায়ের রাব্বি জানান উন্নয়ন বৈষম্যর দিক থেকে বরিশাল অনেক পিছানো। তিনি জানান পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ভাঙা থেকে কুয়াকাটা মহাসড়ক ৬ লেন জরুরি হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি একনেকে ১৬ প্রকল্প পাশ হলেও বরিশালের কোন প্রকল্প না থাকার দু:খ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানান, বরিশাল বিমান বন্দরকে আধুনিক করতে সরকারকে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এমনকি চীনের দেওয়া তিনটি হাসপাতালের একটি বরিশালে স্থাপন দাবির পাশাপাশি পায়রা সমুদ্র বন্দরকে আরো গতিশীল করতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি ।
উল্লেখ্য ২০১৩ সনে আনুষ্ঠানিক ভাবে পায়রা সমুদ্র বন্দর যাত্রা শুরু হয়ে ২০১৬ সনের ১৩ আগষ্টে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের মধ্যে দিয়ে কার্যক্রম হয়। এ পর্যন্ত ৫০০ এর বেশি ১৮০ মিটারের অধিক মাদার ভেসেল পায়রা সমুদ্র বন্দরে ভিড়তে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ১০০০ কোটি রাজস্ব আয় হয়েছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply