মোঃ আব্দুল কাদের
স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ
আজ ৯ ডিসেম্বর—ময়মনসিংহের ত্রিশাল মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিকামী বীর যোদ্ধাদের প্রাণপণ লড়াইয়ের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্তি পায় ত্রিশাল। দেশমাতৃকার জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করা সেই দামাল ছেলেদের গৌরবের কাহিনি আজও স্মরণীয় হয়ে আছে ত্রিশালবাসীর হৃদয়ে।
ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যায়, ৮ ডিসেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নির্দেশনা আসে ত্রিশাল থানা দখল করার। নির্দেশনা অনুযায়ী ১১ নম্বর সেক্টরের এফ জে সাব-সেক্টর আফসার বাহিনীর কমান্ডার আইয়ুব আলী, টুআইসি আব্দুল বারী মাস্টার এবং ভালুকার মেজর আফসার বাহিনীর নাজিম উদ্দিন কমান্ডারের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা রাতে থানার ঘাঁটিতে আক্রমণ চালান। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে সম্মুখ যুদ্ধ। অবশেষে ৯ ডিসেম্বর ভোররাতেই মুক্তিবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে থানা ছেড়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। স্বাধীন হয় ত্রিশাল।
মুক্ত দিবসের আনন্দে আজ (৯ ডিসেম্বর) মঙ্গলবার সকালে বিজয়ের উল্লাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ত্রিশাল। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে বের হয় বর্ণাঢ্য বিজয় শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় জাতীয় পতাকা, বিজয়ের স্লোগান এবং স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পৌর শহরের প্রধান প্রধান সড়ক। পথজুড়ে ছিল উৎসবের আমেজ, আর সেই দৃশ্য আকর্ষণ করে পথচারীদেরও।
বিজয় র্যালিতে নেতৃত্ব দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরাফাত সিদ্দিকী। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহবুবুর রহমান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মফিজুর ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম মোমেনসহ অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারবর্গ।
বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়ে বিজয় উল্লাসে তারুণ্যের প্রাণচাঞ্চল্য যোগ করে।
শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা পরিষদের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা সভা। বক্তারা ত্রিশালের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং স্বাধীনতার মূল্যবোধ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
বিজয় র্যালি ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে ত্রিশালের মানুষ আবারও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ার অঙ্গীকার নবায়ন করে—গৌরবে, শ্রদ্ধায় ও গভীর দেশপ্রেমে।
Leave a Reply