যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের দ্বারা ব্যবসায়ী সোহাগকে বীভৎস ও নারকীয় কায়দায় হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিবৃতি
স ম জিয়াউর রহমান, চট্টগ্রাম থেকে :
সম্প্রতি পুরান ঢাকায় যুবদল ও ছাত্রদলের একদল নেতাকর্মীর হাতে সোহাগ নামের এক ব্যবসায়ীকে বীভৎস ও নারকীয় কায়দায় হত্যার দৃশ্য দেশবাসীকে হতভম্ব করেছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বানিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রের স্বার্থোদ্ধারের ’মেটিক্যুলাসলি ডিজাইনড’ প্লে গ্রাউন্ড বানানোর পথে আরেক ধাপ অগ্রগতি এই নির্মম-নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ড জনগণের আতঙ্ক বাড়িয়ে জাতীয় জীবনে নাগরিকদের অংশগ্রহণকে শূন্যে নামিয়ে আনার আরেকটি অপচেষ্টা। নাগরিকদের অংশগ্রহণ জাতীয় জীবনে যত কমবে ষড়যন্ত্রকারীদের শক্তি আরো সংহত হবে। আর এর মধ্য দিয়ে অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার যে ছক মুহাম্মদ ইউনূস এঁটেছেন এইসব হত্যাকাণ্ড তারই বিল্ডিং ব্লক।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করে এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য দখলদার ইউনূস সরকারকে সম্পূর্ণরূপে দায়ী করছে। পাশাপাশি বিএনপির নীতি ও আদর্শহীন এবং গণবিরোধী রাজনীতিও এই হত্যার জন্য দায়ী।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিয়মিতভাবেই বলে আসছে, অবৈধ দখলদার ইউনূস গং দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে অনিচ্ছুক, অপারগ ও ব্যর্থ। মানুষ সর্বদা অজানা ভয় ও শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। আজকের বাংলাদেশ যেন ভয়ানক মৃত্যুপুরী। যেখানে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ জন এবং মাসে ৩০০ জনের বেশি মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে। এই অবৈধ দখলদার শুধু আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধই নির্বাসিত করে নাই, বরং মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারকে ছুড়ে ফেলে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে দেশবিরোধী অপশক্তির যোগসাজশে মবসন্ত্রাসের এক অভিনব পন্থার প্রচলন করেছে। যেটা দিয়ে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের-সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী প্রগতিশীল মানুষদের উপর আক্রমণ এবং তাদের বাড়িঘর-অফিসে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগকে উৎসাহিত করছে। দখলদার ইউনূস গং আইনের শাসনের বরখেলাপ করে বিএনপি-জামাত-সহ জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আঁতাত করে একটা গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম করেছে।
এরা সুপরিকল্পিতভাবে মতের বিরুদ্ধে মত, মানুষের বিরুদ্ধে মানুষকে, আদর্শের বিরুদ্ধে অনাদর্শ, যুক্তির বিরুদ্ধে কুযুক্তি, তথ্যের বিরুদ্ধে অপতথ্য, মানবতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ, শোভন সমাজের বিরুদ্ধে অশোভন সমাজ, এমনকি সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যাকে দাঁড় করিয়েছে। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজের সকল পর্যায়ে সংহতি একদমই ভেঙে পড়েছে। কেউ কারও প্রতি আর ন্যূনতম আস্থা-বিশ্বাস রাখতে পারছে না। সামষ্টিক থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে স্বার্থের দ্বন্দ্ব চরম অন্ধকার ছুঁয়ে গেছে। যে কারণে রাষ্ট্র ও সমাজের সকল পর্যায়ে চুরি-ছিনতাই, খুন-ধর্ষণ, ডাকাতি-রাহাজানি, চাঁদাবাজি-দখলবাজি লাগামহীনভাবে চলছে। আর রাষ্ট্রযন্ত্র এই সবকিছুকে পরিকল্পিতভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে। খুনি ফ্যাসিস্ট ইউনূসের নেতৃত্বে আজকের বাংলাদেশে মানবিকতা বিলুপ্ত প্রায় এবং নৃশংসতা হয়ে উঠেছে নব্য-স্বাভাবিকতা (Neo-Normal)।
শুধু ব্যবসায়ী সোহাগকে হত্যা নয়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী-সহ হাজার হাজার মানুষকে নির্মমভাবে ও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ সরকার এসব হত্যার বিচারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি হত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরাও বিচার চাওয়ার সাহস করতে পারেনি। কেননা খুনি ও খুনের ইন্ধনদাতারাই আজকে ক্ষমতার মসনদে। জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতাহীন অবৈধ দখলদার এই সরকার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন এবং এ সকল হত্যাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছে।
অবৈধ ইউনূস সরকার সোহাগ হত্যার সুষ্ঠু বিচার করবে কিনা সন্দেহ। কেননা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার আগে এই সরকার নিজ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি চেপে যাবার পাঁয়তারা করেছিল। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরালের পরে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা নড়েচড়ে বসে। আমরা মনে করি, দখলদার ইউনূস সরকারের পক্ষে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা একেবারেই অসম্ভব। কারণ তারা বিভিন্ন অপশক্তির সঙ্গে আঁতাতকারী গোষ্ঠী, যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে সংবিধান লঙ্ঘন করে এবং টিকে আছে বিচারহীনতার চৌহদ্দিতে পা রেখে। যারা একবার বিচারহীনতার সংস্কৃতির চক্রে পা দিয়ে ফেলে তাদের পক্ষে আর আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
আমরা বাংলাদেশের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাই গণবিরোধী এই নীতিহীন রাজনীতি এবং অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে সোচ্চার হোন। একইসাথে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছি যে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভালোবাসা নিয়ে ছাইভস্ম থেকে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে এবং পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে সকল অপরাধের সুষ্ঠু বিচারের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের সকল পর্যায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে। আমরা মনে করি, এইসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে সরকারের শীর্ষ কর্তাব্যক্তি এবং সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, যার বিচার অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মাটিতেই হবে, ইনশাল্লাহ।
Leave a Reply