মোঃ আরিফুল ইসলাম মুরাদ, ষটাফ রিপোর্টারঃ
সেই পুণ্যময় প্রভাত, যখন আসমানের বুকে ভোরের প্রথম আলো বুনছিলো রহমতের জাল, পৃথিবীর নিঃশ্বাস তখন নিবিড়, নিস্তব্ধ, কারণ এক মহামানবের আগমনের জন্য সৃষ্টি যেন নিজেই থেমে ছিল এক ঈশ্বরীয় প্রতীক্ষায়।
সে এক সুবহে সাদেক, যে ভোরে কালের গর্ভে জন্ম নিলেন তাসাউফের চিরজাগ্রত দীপ্তি, আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত প্রিয় বান্দা, রুহানিয়তের সুধাসাগর, বিশ্বওলী হযরত মাওলানা শাহ সুফি খাজা মুহাম্মদ ইউনুছ আলী এনায়েতপুরী (রহঃ)।
তাঁর আবির্ভাব ছিলো না কেবল এক মানব জন্ম, বরং তা ছিল এক আসমানী আহ্বানে সাড়া দেওয়া রূহের আগমন, যার পদধ্বনি নিঃশব্দে জাগিয়ে তোলে ভূ-মানবতার অন্তর্গত অনন্ত স্পন্দন।
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে সুবহে সাদেকের পবিত্র আলোয় এই ধরণীতে আগমন করেছিলেন, ঠিক সেই মহাসাম্য রেখে, আল্লাহর কুদরতের অনুপম তাজাল্লীতে, ১৩০৩ হিজরীর ১১ই জিলহজ্ব, বাংলা ১২৯৩ সনের ২১শে কার্তিক, ইংরেজি ১৮৮৬ সালের এক মোবারক শনিবারে তাঁর আবির্ভাব ঘটে।
এ ছিলো ভোরের এমন এক মূহূর্ত, যেখানে আসমান ও জমিনের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা ছিল না, ছিল শুধুই নূরের সেতু।
সেই সময়ে, বৃহত্তর পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহাকুমা আজকের সিরাজগঞ্জ জেলার পবিত্র পাকভূমি এনায়েতপুর শরীফে, নানাজান হযরত হাজী শহরুল্লাহ (রহঃ)-এর আত্মমগ্ন গৃহে, পরম পূণ্যবতী মাতা তাহমিনা বেগম (রহঃ)-এর কোল জোছনায় ধুয়ে এক নূরানী চেহারার আলোকিত নবজাতকের আগমন ঘটে।
তাঁর মুখচ্ছবি যেন বেহেশতের হাওয়ায় ভেজা, চোখ যেন কুরআনের পংক্তি, আর নিঃশ্বাসে ছিল অদৃশ্য যিকিরের ঝর্ণাধ্বনি।
তিনি ছিলেন নকশাবন্দী-মোজাদ্দেদী, কাদেরীয়া ও চিশতীয়া তরীকার এক অপরূপ সমন্বয়; সুফিবাদের পুষ্পবনে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সুবাসিত ফুল।
বাংলা-আসামের শত শত খানকাহ শরীফ তাঁর তাজাল্লিতে আলোকিত, আর অগণিত মুরিদ তাঁর রুহানিয়তের পরশে
আত্মার বন্ধন ছিন্ন করে ইশক্বের জগতে পাড়ি জমিয়েছে।
এনায়েতপুরের সেই ভূমি আজও জেগে থাকে প্রতিটি কণিকায় রয়ে গেছে সেই আগমনী সকালের স্মৃতি। ধূলির নিচে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাসের পৃষ্ঠাগুলো, তাঁর আবির্ভাবের কথা স্মরণ করে জলদস্যু বর্ণমালায় নয়, আশ্রুতে লেখা এক প্রেমপত্রে।
হে হৃদয়বান পথিক, আজ ১১ই জিলহজ্ব এই দিনটির বুকে লেখা আছে এক সূর্যসন্তানের আগমনী ইতিহাস।এটি শুধুই একটি স্মৃতি নয়, এ এক প্রেমময় চিরন্তন দীপ্তি, যা আজও রুহের অন্ধকারে শিরনি হয়ে ঝরে পড়ে।
Leave a Reply