নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী
ভূমিহীন হয়েও ভুয়া রায়, জাল দলিল আর রাজনৈতিক আশ্রয়ে জমি আত্মসাৎ—হালেম মৃধার বিরুদ্ধে জমা হচ্ছে একের পর এক অভিযোগ; এলাকাবাসীর দাবি, দ্রুত সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হোক।
ছৈলাবুনিয়া (গলাচিপা),পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার আমখোলা ইউনিয়নের ছৈলাবুনিয়া গ্রামে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে এক চাঞ্চল্যকর ও জঘন্য প্রতারণার ঘটনা। দীর্ঘদিন ধরে এক ভয়ঙ্কর ভূমিদস্যু চক্রের দৌরাত্ম্য চলেছে—আর সেই চক্রের মূলহোতা হিসেবে স্থানীয়রা এক নামের সঙ্গে পরিচিত: মোঃ হালেম মৃধা। নিজের নামে কোনো বৈধ জমি না থাকলেও, ভুয়া আদালতের রায়, জাল দলিল, এবং রাজনৈতিক দালালি দিয়ে অন্তত ২.৮৯ একর জমি দখল করে রেখেছেন তিনি। স্থানীয়ভাবে ‘হালেম উকিল’ নামে পরিচিত হলেও, তার কোনো আইনগত সনদ বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। তার বিরুদ্ধে জমি আত্মসাৎ, মিথ্যা মামলা দেওয়া, প্রাণনাশের হুমকি ও জনমনে ভীতি সৃষ্টির একাধিক অভিযোগ রয়েছে।তিনি এমন একব্যক্তি যে আল্লাহ উপরে সেকেন্ডে সেকেন্ডে কসম খেয়ে মিথ্যা বলে। এবং এই কাজের দোসর হাকিম আলী মৃধা ও তার ছেলে লিটন। হালেম মৃধা ও তার দোসরদের কর্মকাণ্ড শুধু ছৈলাবুনিয়া নয়—পুরো অঞ্চলের জন্যই এক গভীর হুমকি।
“উকিল”নামের প্রতারক: যে কিনা সনদহীন কাগজপত্রের কারিগর
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, হালিম মৃধা কোনোদিন আইনের বই হাতে না নিলেও নিজেকে ‘উকিল’ পরিচয়ে চালান। আসলে তিনি একজন স্বঘোষিত, সার্টিফিকেট-বিহীন প্রতারক, যার কাজই হচ্ছে মানুষকে ঠকানো, নকল দলিল বানানো, এবং বোকা বানিয়ে জমি হাতিয়ে নেওয়া। স্থানীয়রা তাকে উপহাস করে বলেন—“হালেম উকিল ওরফে কাগজ-চোর দালাল।” তার বিরুদ্ধে বাড়ির আশপাশেই অন্তত ১০টির বেশি জাল দলিল বানিয়ে জমি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অথচ তার নিজের নামে কোনো জমির খতিয়ানই নেই। কাঠেরপোল চায়ের দোকানে যাকে নিয়ে উঠে বিশাল হাস্যরসাত্মক গল্পগুজব। কেউ কেউ তাকে চোরা হালিম নামেও ডাকে। হালেম মৃধা যেনো একটা উপহাসের নায়ক এবং মানুষের হাসির খোরাক।
ছদ্মবেশী চোর প্রতারক ও চেয়ারম্যানের ছায়া
সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মনিরের সরাসরি আশীর্বাদপুষ্ট এই হালিম মৃধা ওরফে দালাল উকিল দীর্ঘদিন ধরে ‘রাজনৈতিক পরিচয়ে’ এলাকায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, চেয়ারম্যান মনিরের ক্ষমতার ছায়ায় থেকে এরা গোপনে অসংখ্য জমি আত্মসাৎ করেছে। ত্রাণের অসংখ্য বস্তা চাল-ডাল নিজের ঘরে তুলছে, মনির চেয়ারম্যানকে মামু মামু ডেকে। ভূয়া উকিল নিজে জীবিত থাকলেও, তার স্ত্রী পাচ্ছেন “বিধবা ভাতা” এবং জেলেদের নামের ভিজিপি চাল।
জাল রায় দিয়ে জমি দখল: ৬৯ বছরের জমি দখলের উৎসভূমি
আসামিরা আদালতের রায় জালিয়াতি করে ২.৮৯ একর জমি নিজেদের নামে নামজারি করে তা দীর্ঘ ৬৯ বছর ধরে দখলে রেখেছে যা জালিয়াতির ফসল। মূলত, তারা নিজেরাই ‘বিচারক’, নিজেরাই ‘বাদী’—আর জাল স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করে আদালতের একটি ভুয়া ডিগ্রি বানিয়ে রীতিমতো আইনের চোখে ধুলো দেয়।
আইন চোখে রেখেছে: আদালতের কড়া অবস্থান
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে পটুয়াখালীর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাদের বিরুদ্ধে জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে গত ৮ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামিদের জামিন বাতিল করেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ‘এই মামলার গুরুত্ব বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতার সাথে জড়িত।’
মরা গরু ও নতুন নাটক: ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে গেলেন
এখানেই শেষ নয়। ২০ ফেব্রুয়ারি, হাকিম আলীর ছেলে লিটন ,তাদের একটি স্বাভাবিকভাবে মারা যাওয়া গরুকে কেন্দ্র করে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করে। অভিযোগ তোলে, তার গরুকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসী ঘটনার স্বচ্ছ ব্যাখ্যা দিতে থাকলে ফাঁস হয় চক্রান্ত। সকলে বুঝে যায়—এটা একটি সাজানো নাটক।
প্রতিদিন হুমকি-ধমকি: নিরাপত্তাহীনতায় বাদীপক্ষ
বাদীপক্ষ দাবি করছে, মামলা করায় তারা প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন। হালিম মৃধা ও তার অনুসারীরা প্রতিনিয়ত ভয়ভীতি দেখিয়ে চলেছেন। এমনকি, তাদের বিরুদ্ধে নতুন মিথ্যা মামলার হুমকিও চলছে।একজন ভুক্তভোগী বলেন, “এটা শুধু জমির মামলা না—এটা ন্যায়বিচারের বিরুদ্ধে লড়াই।”এলাকার একটাই দাবি—‘এই দুই পশুপ্রাণীকে কারাগারে রাখুন’। অঞ্চলের মানুষের এখন একটাই দাবি—এই দুই চতুর, ভয়ংকর ও নির্লজ্জ প্রতারকের বিরুদ্ধে কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক। তারা যেন আর কখনো কোনো জমির কাছে ঘেঁষতেও না পারে।গভীরতর তদন্ত চাই, প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ চাই।হালিম মৃধা যেন আর কাউকে জাল সিল দিয়ে ঠকাতে না পারে—এই দাবি আজ ছৈলাবুনিয়ার প্রতিটি ঘরে।
দলিল বিক্রির ঘটনা: আশেপাশে অন্তত ১০টি অভিযোগ
ছৈলাবুনিয়া গ্রামে, হালেম মৃধার বিরুদ্ধে আশেপাশের লোকজন অন্তত ১০টি জমি বিক্রির ঘটনায় প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভুয়া দলিল বানিয়ে কখনও জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখিয়ে, কখনও দখলীয় জমিকে খালি দাবি করে, জমি বিক্রি করেছেন একাধিক ব্যক্তির কাছে।
এই দুই অপরাধী—হালেম মৃধা ও হাকিম আলী মৃধা, শুধু প্রতারক নয়, তারা বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে কাঁধে করে টেনে এনে অপমান করেছে। আদালতের নাম-সীল-স্বাক্ষর নকল করা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়—এটি সরাসরি রাষ্ট্রের উপর আঘাত। প্রশাসনের প্রতি এলাকাবাসীর আহ্বান—এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও জালিয়াতির গুরুতর মামলা দিয়ে কঠোর বিচার নিশ্চিত করা হোক। এবং তাদের সহযোগী রাজনৈতিক দালালদেরও আইনের আওতায় আনা হোক।
Leave a Reply