স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার শিবগঞ্জে অবস্থিত আফাকু কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেডের প্রায় ৩৮ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করতে পলাতক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের জাল স্বাক্ষর ও ভুয়া নথি ব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়কে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জেলা ও দায়রা জজ আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে মিল্লাত হোসেন নামের এক ব্যক্তি এ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রাথমিক নথি ও তথ্য পর্যালোচনা করে আদালত অভিযোগ আমলে নেন এবং বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় দুদককে দ্রুত তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) সূত্র জানায়, আফাকু কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম নাজমুল কাদির শাজাহান চৌধুরী—যিনি জুলাই গণহত্যা সংক্রান্ত একাধিক মামলার আসামি—২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট স্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইসমত আরা লাইজুসহ যুক্তরাষ্ট্রে দেশত্যাগ করেন। অথচ ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর ইসলামী ব্যাংকে জমা দেওয়া বোর্ড সভার রেজুলেশনে তাদের বগুড়ায় উপস্থিত থেকে সভায় অংশগ্রহণ ও স্বাক্ষরের তথ্য দেখানো হয়। এসবি’র অনুসন্ধানে উক্ত স্বাক্ষর ও নথি জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
ইসলামী ব্যাংক বড়গোলা শাখা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে আফাকু কোল্ড স্টোরেজকে ২২ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়, যা সুদ ও মুনাফাসহ বর্তমানে প্রায় ৩৮ কোটি ৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ছয়বার ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা পেয়েছে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নথিতে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ পরিশোধে গড়িমসির বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রচলিত নীতিমালা অনুযায়ী লাভজনক ও জালিয়াতিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান নীতি সহায়তার আওতায় পুনঃতফসিলের যোগ্য নয়। তবুও পুলিশের বিশেষ শাখার লিখিত প্রতিবেদন উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মহল পুনঃতফসিলের প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে।
মামলায় ইসলামী ব্যাংক পিএলসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং আফাকু কোল্ড স্টোরেজের চেয়ারম্যানসহ মোট সাতজনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বগুড়া জোনাল ইনচার্জ সিকদার শাহাবুদ্দিন বলেন, “মামলার বিষয়টি এখনও আমাদের নজরে আসেনি। বিস্তারিত জানার জন্য প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।”
দুদক বগুড়া সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মাহফুজ ইকবাল জানান, “আদালতের নির্দেশের কপি পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে।”
এদিকে, বিদেশে পলাতক অবস্থায় থাকা ঋণখেলাপিকে বিপুল অঙ্কের ঋণ পুনঃতফসিলের সুবিধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে
Leave a Reply