1. lifemedia766@gmail.com : admin : Badsah Deoan
  2. aglovelu99@gmail.com : Ag Lovelu : Ag Lovelu
  3. infocrime24@gmail.com : info crime24 : info crime24
  4. crimereport24@gmail.com : Crime Report : Crime Report
  5. musasirajofficial@gmail.com : Musa Asari : Musa Asari
  6. crime7775@gmail.com : Ariful Islam : Ariful Islam
  7. nurealomsah@gmail.com : Nure Alom Sah : Nure Alom Sah
অপুর সংসার: নিঃশব্দ যন্ত্রণা থেকে নিঃসীম ভালোবাসার অনুপম কবিতা - Crime Report 24
বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম
নেত্রকোণায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ১২কেজি গাঁজাসহ ২জন আটক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষার অগ্রগতি ও উন্নয়ন শীর্ষক মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত কলাপাড়ায় অসহায় গৃহহীনের জন্য ঘর নির্মাণ’র চাবি হস্তান্তর ও খাদ্য সহায়তা প্রদান আমতলীতে তালাকের তথ্য গোপন করে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক, আদালতে মামলা! কলাপাড়ায় শ্রমিকলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার হামলায় গুরুতর আহত-৩ পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং বরিশালের উন্নয়ন ঘিরে গভীর ষড়যন্ত্র ধামরাইয়ে সেলফি পরিবহনের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত আপেলের পাহাড়ে নতুন লুকে শাবনূর ময়মনসিংহ সিপিএসসি, র‍্যাব-১৪ কর্তৃক মাদকসহ ০১ নারী মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার কালিয়াকৈরে এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সচিব সহ দুই শিক্ষকে অব্যাহতি

অপুর সংসার: নিঃশব্দ যন্ত্রণা থেকে নিঃসীম ভালোবাসার অনুপম কবিতা

  • প্রকাশকাল: মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫

– সত্যজিতের ক্যামেরায় জীবন হয়ে ওঠে শিল্পের সংজ্ঞা
যদি চলচ্চিত্রকে বলা হয় চলমান চিত্রের শিল্প, তবে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’ সেই শিল্পের শ্রেষ্ঠতম নিদর্শনগুলোর একটি, যা নিছক ছবি নয়—এ যেন ক্যানভাসের গায়ে বাস্তবের রং মেখে তৈরি এক জীবন্ত কবিতা। এই চলচ্চিত্র আমাদের শুধুমাত্র এক ব্যক্তির জীবনকাহিনি বলে না; বরং তুলে ধরে আমাদেরই জীবনের গভীরতম আবেগ, টানাপড়েন, স্বপ্নভঙ্গ, এবং সবশেষে, নতুন করে শুরু করার সাহস। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’-এর শেষাংশ থেকে নেওয়া হলেও, রায়ের ক্যানভাসে এই গল্প হয়ে ওঠে এক নতুন সত্তা—যেখানে সাহিত্যের আলো ছাপিয়ে উঠে আসে সিনেমার ভাষায় অনুপম মানবিক অভিব্যক্তি।

ছবির শুরুতে আমরা দেখি অপুকে—এক নিঃসঙ্গ, দরিদ্র, অথচ স্বপ্নবাজ যুবক, যিনি কলকাতার গলিপথে জীবনকে বোঝার চেষ্টা করছে, বইয়ের পাতায় ভবিষ্যৎ খুঁজছে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সাবলীল অভিনয়ে অপু হয়ে ওঠে চিরচেনা, যেন পাশের বাড়ির তরুণ, যার মধ্যে লুকিয়ে আছে হাজারো না বলা কথা। সত্যজিৎ এখানে ক্যামেরাকে ব্যবহার করেন এক ভাষ্যকার হিসেবে—যে কথা বলে না, কিন্তু দেখায়; শোনায় না, কিন্তু অনুভব করায়।

অপুর জীবনে যে এক রঙিন ঝলক এনে দেয়, সে অপর্ণা। শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত অপর্ণা চরিত্রটি যেন ঔজ্জ্বল্যের মধ্যেও এক মৃদু আলো—যার উপস্থিতি যেমন নরম, তেমনি গভীর। তার বিয়েটি যেমন আকস্মিক, তেমনি তার ভালোবাসার প্রকাশেও আছে পরিণত এক স্থিরতা। অপর্ণা মুখে অল্প বলে, কিন্তু চোখে বলে অনেক কিছু। তাদের সংসার যেন বাস্তবতা ও স্বপ্নের মিলনস্থল—একটি ছোট ভাড়া বাসা, অল্প আয়ের মধ্যে সুখের সন্ধান, দুজনের চোখে চোখ রেখে ভবিষ্যতের কল্পনা। সত্যজিতের ক্যামেরা কখনো কাছ থেকে চরিত্রের মুখ দেখায়, কখনো দূর থেকে সময়কে বোঝায়, আর কখনো নিঃশব্দ কেটে যাওয়া পলগুলোকে স্মৃতির মত বুনে রাখে ফ্রেমে।
কিন্তু জীবন যেমন নিষ্ঠুর, তেমনি হঠাৎ বদলাতেও জানে। অপর্ণার মৃত্যু সেই মুহূর্ত, যেখানে সময় থেমে যায়। রায় এখানে কোনো আবেগ দিয়ে দর্শককে আঘাত করেন না; বরং শোকের নিরবতা দিয়ে তিনি বুকের গভীরে ঢুকিয়ে দেন ব্যথার ছায়া। অপু তার সদ্যজাত পুত্রকে দেখতে চায় না—ভালোবাসা হারানোর ভয় এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে। এই পলায়নপরতা, এই শূন্যতা—এ যেন এক মানবিক চিৎকার, যা কোনো সংলাপ ছাড়াই অনুরণিত হয় দর্শকের মনে।

এরপর আসে অপুর আত্ম-অন্বেষণের পর্যায়। শহর ছেড়ে সে চলে যায় অজানার পথে। পাহাড়, নদী, রেললাইন—সবকিছু যেন তার অন্তর্জগতের প্রতিফলন। এখানে প্রকৃতি হয়ে ওঠে চরিত্র, এবং নীরবতা হয়ে ওঠে ভাষা। সত্যজিত রায়ের ছবির অনন্য দিক এই যে, যেখানে শব্দ নেই, সেখানে চোখ ও আলো বলে দেয় অনেক কিছু। একসময় সে ফিরে আসে, যেন জীবনের কাছে নতজানু হয়ে নয়, বরং তাকে নতুন করে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত হয়ে। পুত্র কাজল, যে প্রথমে তাকে চেনে না, ক্রমশ তার সঙ্গী হয়ে ওঠে। সেই পুনর্মিলনের দৃশ্য আমাদের দেখায়, জীবনের শেষ নেই—প্রেম, সম্পর্ক আর মানবিকতা সব সময়ই এক নতুন সকাল খোঁজে।

চরিত্রগুলো যেন জীবনেরই প্রতিরূপ। অপু আমাদের প্রতিটি লড়াইয়ের নাম; অপর্ণা এক নারীর সৌন্দর্য, সংযম ও আত্মিক প্রেমের প্রতীক; কাজল ভবিষ্যতের আশা, আর পুলু বন্ধুত্ব ও সাহচর্যের প্রতিমূর্তি। তাদের জীবনের টানাপড়েন কোনো রূপকথা নয়, বাস্তবতা—যা আমাদের চেনা, আমাদের জীবনেই দেখা।

টেকনিক্যাল দিকেও ছবিটি নিঃসন্দেহে এক অনন্য শিল্পকীর্তি। সুব্রত মিত্রের ক্যামেরা চিত্রনাট্যের মতোই জীবন্ত। আলোর ব্যবহারে, ছায়ার খেলায়, প্রতিটি ফ্রেম যেন এক ছবির মত। রবিশঙ্করের সঙ্গীত—তবলার টান, সেতারের আবেগ—চলচ্চিত্রকে শুধুই শ্রবণযোগ্য করে তোলে না, বরং আবেগের সঙ্গীতায়ন হয়ে ওঠে। সত্যজিতের সংলাপ কম, দৃশ্যের ভাষা বেশি—এই ‘show, don’t tell’ কৌশলই ছবিটিকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে দেয়।

অপুর সংসার তার নির্মাণে যেমন পরিশীলিত, তেমনি অনুভবে অসামান্য। এই চলচ্চিত্র আমাদের শেখায়, ভালোবাসা হারালে মানুষ ভেঙে পড়ে ঠিকই, কিন্তু সেই শূন্যতা পূর্ণতা লাভ করে নতুন সম্পর্কের গভীরে, আত্মদানের মধ্যে। অপু যখন কাজলকে কাঁধে তুলে নেয়, সেই মুহূর্তে সিনেমা তার চূড়ান্ত ব্যঞ্জনায় পৌঁছায়—যেখানে চোখের জলে মিশে থাকে জীবনের জয়গান।

এই ছবিটি জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্তরেও সমাদৃত, কিন্তু তার আসল পুরস্কার হচ্ছে সময়—যা তাকে অমর করে রেখেছে দর্শকের হৃদয়ে। আজও, শত শত সিনেমার ভিড়েও ‘অপুর সংসার’ স্বতন্ত্র, কারণ এটি কেবল একটি ছবি নয়—এটি জীবনকে দেখার, ভালোবাসার এবং গ্রহণ করার এক অনুপম দৃষ্টিভঙ্গি।

লেখক:
মোঃ আবু মুসা আসারি
ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
চলচ্চিত্র বিশ্লেষক ও সাহিত্যপ্রেমী

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এধরণের অন্যান্য নিউজ