অনলাইন ডেস্ক
গণতন্ত্রের পথ ধরে বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার শপথে গতকাল বুধবার উদযাপিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। সকাল থেকে শুরু করে দিনভর রাজধানীসহ সারাদেশে এমনকি বিদেশেও বাংলাদেশ দূতাবাসে ফুলেল শ্রদ্ধা, দোয়া মাহফিল ও আলোচনায় একাত্তরের বীর শহীদদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে মানুষ। স্বাধীনতার ৫৫ বছর উদযাপনের মূল আয়োজন ছিল সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানায় সর্বস্তরের মানুষ।
গতকাল ভোর ৫টা ৫০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ সময় কয়েক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর চৌকস দল তাদের রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা, তিন বাহিনীর প্রধানরা, মুক্তিযোদ্ধা, বিদেশি কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এরপর শ্রদ্ধা জানান বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। শ্রদ্ধা জানান উপদেষ্টাম-লী ও বিদেশি কূটনীতিকরাও। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি এসএম এমদাদুল হক, বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আজিজ আহমেদ ভূঞা। এ ছাড়াও সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা। তিনি বলেন, জাতীয় স্বার্থে ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা ঐকমত্য পোষণ করব।
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ৭১-এ আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা। কখনোই একটি স্বাধীন ভূখ-ে এ দেশের মানুষ আর পরাধীনতা বোধ করবে না।
সকাল আটটার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নেতারা। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান, ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াছিন ফেরদৌস মুরাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সাড়ে আটটার দিকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এসসিপি) নেতারা। এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, মুখ্য সমন্বয়ক নাছির উদ্দিন পাটোয়ারী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এরপর সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় জাতীয় স্মৃতিসৌধ। বীর শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধায় ফুলে ফুলে ভরে উঠে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ বেদী।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এসসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির যে তিন দাবি- বিচার, সংস্কার এবং গণপরিষদ নির্বাচন; আমরা মনে করি, সেই পথে গেলেই জাতির উত্তরণ ঘটবে গণতন্ত্রের পথে।
এদিকে স্বাধীনতা দিবসে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ থেকে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ কেন্দ্রীয় সংসদের মহাসচিব সেলিম রেজা (৪৫), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য মো. শহিদুল ইসলাম (৪৮) এবং আশুলিয়ার দক্ষিণ গাজীরচট এলাকার মো. সোহেল পারভেজ (৪০)।
বেলা সোয়া ১১টার দিকে প্রায় ৩০ জনের একটি দল শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে লাল পতাকা হাতে ফিরছিলেন। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘৭১-এর হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’- ইত্যাদি স্লোগান দেন। পরে পুলিশ ধাওয়া করে তাদের তিনজনকে আটক করে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতাকর্মীরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ জহির চন্দন, কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজলুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মনিরা বেগম অনু, নিমাই গাঙ্গুলী, আবিদ হোসেন, জাহিদ হোসেন খান, কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক সাদেকুর রহমান শামীমসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের নেতৃত্বে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানিয়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বে দলটির নেতাকর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানান। এ ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দলের অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন
নানা আয়োজন ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অপর্ণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা, দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া ও মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশন ইত্যাদি।
সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। পরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যানরা, অফিস প্রধানগণ, শিক্ষকরা, সহকারী প্রক্টররা, ছাত্রছাত্রী, চিকিৎসক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা পুষ্পস্তবক অপর্ণ করে শ্রদ্ধা জানান। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দেশ ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনায় মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়াও বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
Leave a Reply