ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার চাপাসার তাজিগাঁও সীমান্তের টেংরিয়া গোবিন্দপুর কুলিক নদীর পারে শ্রী শ্রী জামর-পাথর কালীপূজা উপলক্ষে এবার হয়নি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের দুই বাংলার মিলনমেলা।
শুক্রবার জেলার রাণীশংকৈল-হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী পাথর কালিতে দুই দেশের এ মিলনমেলা হবার কথা থাকলেও এবারে তা হয়নি। সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের অবনতির কারণে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এই মেলাসহ সীমান্তের কাঁটাতার এলাকায় জনগণের সমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।
জানাযায়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এদেশের অনেক আত্মীয়-স্বজন ভারতীয় অংশে পড়ে। ফলে অনেকেরই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে তারা উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর অলিখিত সম্মতিতে প্রতি বছর এই সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে দেখা সাক্ষাত করার সুযোগ পান। হরিপুরের কুলিক নদী পার হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাসার ও কোঁচল এবং ভারতের মাকড়হাট ও নারগাঁও সীমান্ত এলাকা থেকে ৩৪৪/৪৫ নং মেইন পিলার সংলগ্ন এলাকার কাঁটা তারের দ’ুপ্রান্তে ভিড় করে দুই বাংলার হাজার হাজার নারী পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ। এতে ওই সীমান্তে এক মিলন মেলায় পরিনত হয়। কেউবা তারকাঁটার ওপর দিয়ে খাবার আদান প্রদান, আবার কেউবা সুখ দুঃখের কথা বলে সময় পার করেন। আর পুজাকে ঘিড়ে সীমান্ত পারেই বিভিন্ন জিনিস পত্রের পসড়া সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা।
সীমান্ত বাসীরা জানান, ভারত আর বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেনা, তারা এ দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে। এই দিনে তারা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা- সাক্ষাৎ করে। এদিনে দু’দেশের অনেকে আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত করেন। কেউ মায়ের সঙ্গে, কেউ বা বোনের অথবা আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা এবং কথা বলার সুযোগ পান।
জামর কালি জিউ পাথরকালি পূজা কমিটির সভাপতি নগেণ কুমার পাল বলেন, কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই ভারতীয়রা এ মেলায় আসতে পারে। হাজার হাজার ভারতীয় প্রতিবছরই মেলায় এসে বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে। প্রতিবছরই এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করি। তবে এবার পূজা হলেও মিলনমেলা আর হয়নি। এতে আমরা অনেক মর্মাহত হয়েছি। আশা করছি আগামীতে এ সমস্যার সমাধান হবে। এটি একটি ঐতিহাসিক মেলা। মেলা করতে না দিলেও পূজা করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করেছে প্রশাসন।
হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামান বলেন, প্রতিবছরের ন্যায় এাবারো পাথরকালির পূজা উৎযাপন হয়েছে। তবে কেউ যাতে আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘণ করে ওপারে না চলে যায় সে কারনে আমরা
এই পাথরকালি পূজাকে কেন্দ্র করে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় সে মেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। প্রশাসনের লোকজন সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের এখানে মোতায়েন করা হয়েছে।
৪২ বিজিবি’র অধিনায়ক লে: ক: আহসানুল ইসলাম জানান, এভাবে কোন দেশের সীমানায় দু দেশের লোকজন একত্রিত হবে, যেহেতু আন্তর্জাতিক সীমানা আইনে এমন কোন বিষয় নেই তাই আমরা বিগত কিছু বছর ধরেই এখানকার লোকেদের নিরুৎসাহিত করে আসছিলাম। আমাদের কাছে তথ্য ছিল যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এবার সীমান্তের কাটা তারের বেড়ায় কাউকে ঘেষতে অনুমতি দেবেনা তাই সবার সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। তবে তারা তাদের মত করে পূজা করেছে এবং আমরা পূজা করতে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছি।
Leave a Reply